বীরগঞ্জে দেবোত্তর জমিতে মাদ্রাসা নির্মাণ : সম্প্রীতি বিনষ্টের আশঙ্কা

দিনাজপুরের বীরগঞ্জে শ্রী শ্রী কান্তজিউ দেবোত্তর জায়গায় মাদ্রাসা ঘর নির্মাণকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। দেবোত্তর জমিতে হঠাৎ গড়ে ওঠা মাদ্রাসা ঘর অপসারণসহ সব ধরনের অবৈধ লিজ বাতিলের দাবিতে গতকাল দিনাজপুরের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন মৌন মিছিল করে স্মারকলিপি দিয়েছে। এদিকে গতকাল এক জরুরি সভায় জেলা প্রশাসক মো. নবীউল হক মোল্যা মাদ্রাসা ঘর অপসারণসহ অবৈধ লিজ বাতিলে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন বলে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের আশ্বস্ত করেছেন। এছাড়াও গতকাল সকাল ১১টায় হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টসহ কয়েকটি সংগঠন মৌন মিছিল করে জেলা প্রশাসক মো. নবীউল হক মোল্যাকে স্মারকলিপি দেয়।

জানা গেছে, গত ১৬ জানুয়ারি সকালে কতিপয় ব্যক্তি দেবোত্তর সম্পত্তির ৯৫ দাগে মাদ্রাসা ঘর নির্মাণের জন্য বাঁশ, চাটাই, টিন নিয়ে গেলে স্খানীয় হিন্দু জনসাধারণ বাধা দেয়। পরের দিন ১৭ জানুয়ারি হিন্দু জনসাধারণের পক্ষে বীরগঞ্জ কেন্দ্রীয় মহাশ্মশান উন্নয়ন ও পরিচালনা কমিটির উপদেষ্টা মতিলাল দাস বীরগঞ্জ থানায় অবৈধভাবে মাদ্রাসা ঘর নির্মাণের বিষয়টি অবহিত করে একটি জিডি করেন। জিডি নং-৫৯০। জিডিতে দেবোত্তর জায়গায় অবৈধভাবে মাদ্রসা নির্মাণ বসহ এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা ও সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। এ ব্যাপারে বীরগঞ্জ ভূমি অফিসে যোগাযোগ করা হলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু রায়হান জানান, ১৯৭৮-৭৯ সালে সেটেলমেন্ট কেসে দেবোত্তর সম্পত্তির ৯৫ দাগের ৮৫ শতক জমি জনৈক মো. নুহু নামে একজনকে চিরস্খায়ী বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়। এর মধ্যে মো. নুহু ৩৩ শতক জমি বীরগঞ্জ শান্তিবাগ আলহেরা নূরানী তালিমুল কুরআন মাদ্রাসার কাছে বিক্রি করেছেন। সে সূত্র ধরে মাদ্রাসা কমিটি দেবোত্তর জায়গায় ঘর তুলেছেন বলে তিনি জানান। তবে দেবোত্তর সম্পত্তির লিজ বা চিরস্খায়ী বন্দোবস্ত দেয়ার কোন বিধান নেই। কিভাবে চিরস্খায়ী বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে হবে।

শান্তিবাগ আলহেরা নূরানী তালিমুল কুরআন মাদ্রাসার সভাপতি সিদ্দিকুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ২০০৭ সালে মাদ্রাসা কমিটি ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে ৩৩ শতক জায়গা মো. নুহুর কাছ থেকে ক্রয় করেন। এর মধ্যে এ পর্যন্ত ৪ লাখ টাকা নুহু মিয়াকে মাদ্রাসা কমিটি প্রদান করেছেন। কিন্তু কাগজপত্রে জটিলতা থাকার কারণে এখন পর্যন্ত ক্রয়কৃত জায়গাটি রেজিস্ট্রি করা সম্ভব হয়নি। তিনি আরও বলেন, গত ২৭ জানুয়ারি সকালে তারা বেড়া দিয়ে মাদ্রাসা ঘর নির্মাণ কাজ শুরু করেন এবং পরের দিন ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩টি ঘর তুলেছেন। জায়গা রেজিস্ট্রি ছাড়া কেন দেবোত্তর সম্পত্তিতে মাদ্রাসা নির্মাণ করছেন এ প্রশ্নের জবাবে তিনি কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।

স্খানীয় হিন্দু জনসাধারণ জানায়, থানায় জিডি করার পরও পুলিশ কোন ব্যবস্খা নেয়নি। বীরগঞ্জ উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অরুন চন্দ্র দাস জানান, ঘর নির্মাণের বিষয়টি বীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাম্মেল হককে বার বার অবহিত করা হলেও তিনি কার্যকর পদক্ষেপ নেননি। থানায় জিডি করার ১০ দিন পর দেবোত্তর জায়গায় মাদ্রাসা ঘর নির্মিত হয়েছে।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারুফ হাসানের উপস্খিতিতে উভয়পক্ষের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দেবোত্তর সম্পত্তি থেকে সদ্য নির্মিত মাদ্রাসা ঘরটি অপসারণের জন্য মাদ্রাসা কমিটিকে নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে মাদ্রাসা ঘরটি এখনও অপসারণ করা হয়নি। উপরন্তু ২ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুর এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সিআরপিসি বীরগঞ্জ আদালতে মো. নুহু বাদী হয়ে স্খানীয় হিন্দু নেতাদের বিবাদি করে একটি মামলা করেন। মামলার আরজিতে বাদি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের লক্ষ্যে উস্কানিমূলক উক্তি ব্যবহার করেন।

সংবাদ, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০০৯

5 comments: