নোয়াখালী প্রতিনিধি। যায় যায় দিন, ১৬/০২/২০০৮
জেলার কবিরহাট উপজেলার পশুরামপুর গ্রামে পূর্ব বিরোধের জের ধরে সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা গতকাল সকালে তিনটি হিন্দু বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। এ সময় নারী ও শিশুসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে ছয়জনকে নোয়াখালী জেনারেল হসপিটালে ভর্তি করা হয়। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নরোত্তম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন ফারুক ও স্থানীয়রা জানান, পশুরামপুর গ্রামে শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ সেবাশ্রমে মাঘী বিষ্ণুপদী সংক্রান্তি উপলক্ষে বুধবার ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলাকালে সন্ধ্যায় খাওয়ার সময় কয়েকজন যুবক তাদের উত্যক্ষ করতে গেলে কর্তব্যরত স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে যুবকরা হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার পার্শ্ববর্তী লেমুয়া গ্রামের সন্ত্রাসী স্বপন ও জ্যাকসনের নেতৃত্বে কয়েকজন যুবক চিন্তাহরণ ডাক্তার বাড়িতে ফল চুরি করতে এলে বাড়ির লোকজন বাধা দিলে তারা ওই বাড়ির রান্নাঘরে ঢুকে মহিলাদের ওপর হামলা চালায়। মহিলাদের চিৎকারে স্থানীয়রা ঘটনাস্থল থেকে স্বপন(১৮) ও জ্যাকসনকে (১৮) ধরে ফেলে। হিন্দুরা চেয়ারম্যানকে ফোনে এ ঘটনা জানালে তিনি কবিরহাট থানায় খবর দেন। রাত ১২টায় পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। পরে করমবক্স বাজারের সেক্রেটারি হুমায়ুন কবির ও করমবক্স সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কাদের মাস্টার, স্থানীয় মেম্বার আহছান উল্যার উপস্থিতিতে মুচলেকা দিয়ে স্বপন ও জ্যাকসনকে ছাড়িয়ে নেয়।
এদিকে এ ঘটনার জের হেসেবে গতকাল সকাল ৯টায় সন্ত্রাসী যুবক লাঠি, রড, হকিস্টিক নিয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে চিন্তাহরণ ডাক্তার বাড়ি, মতোরি বাড়ি, ননী ভট্ট বাড়িতে একযোগে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। সন্ত্রাসীরা ঘরের ভেতর আসবাবপত্র আলমিরা ব্রাপক ভাংচুর করে এবং মহিলাদের স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেয়। এ সময় সন্ত্রাসীদের হামলায় নারী ও শিশুসহ ৩০ জন আহত হয়। গুরুতর আহত বাবলু(১৭), তুলসী রাণী (৪০), বিধান(২০), পংকজ(৩৫), শিমুল(১৭), সুমন (২৩), বাসু দেব (৪০), সানুরাণী(৩৫) ও রিনুকে (৮) হসপিটালে ভর্তি করা হয়।
ডাক্তার বাড়ির সরকারি স্কুল শিক্ষক রিটায়ার্ড দুলাল চন্দ্র জানান, কাদের মাস্টার ও বাজার সেক্রেটারি হুমায়ুনের নেতৃত্বে সোহাগ, সামছুল হক, জাকের, স্বপন, আবদুর রহিম, জ্যাকসন, মিয়াধন এবং এনাম চা দোকানিসহ প্রায় দুই শতাধিক সন্ত্রাসী হামলা, ভাংচুর ও নারী নির্যাতন চালায় এবং লুটপাট করে। তিনি বলে, আমরা বর্তমানে তিন বাড়ির ২৫টি পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। কবিরহাট তানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে এম কাউছার চৌধুরী জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। নতুন করে সংঘর্ষ এড়াতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও তিনি জানান। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রাত সাড়ে ৯টা) মামলার প্রস্তুতি চলছিল।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment